Labels Max-Results No.

শীতকালীন শাকসবজি চাষের সেরা টিপস: পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

শীতকালীন সবজি চাষ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ শীতকালের আবহাওয়া বেশ কিছু শাকসবজির জন্য আদর্শ। সঠিক পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক ব্যবহারে শীতকালীন সবজির ভালো ফলন পাওয়া যায়। নিচে শীতকালের প্রধান সবজি ও শাকগুলো এবং তাদের পরিচর্যা সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা দেওয়া হলো।



১. বাঁধাকপি (Cabbage)

  • বপনের সময়: অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
  • পরিচর্যা: বাঁধাকপি ভাল নিষ্কাশনযুক্ত, সূর্যের আলোযুক্ত এবং উর্বর মাটিতে ভালোভাবে জন্মায়। গাছের চারপাশে নিয়মিত মাটি আলগা করা এবং আগাছা পরিষ্কার করা উচিত।
  • সার প্রয়োগ: মূলত জৈব সার (কম্পোস্ট) এবং ইউরিয়া, পটাশ, ফসফেট সার প্রয়োগ করা উচিত। প্রথমে বীজ রোপণের সময় মাটিতে জৈব সার মেশানো উচিত এবং ১৫ দিন পর থেকে ইউরিয়া ও পটাশের প্রয়োগ চালাতে হবে।
  • কীটনাশক: কীটপতঙ্গের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিম তেল বা ক্লোরপাইরিফস জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন।

২. ফুলকপি (Cauliflower)

  • বপনের সময়: অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর।
  • পরিচর্যা: ফুলকপি সুনিষ্কাশিত মাটি পছন্দ করে। নিয়মিত মাটি নাড়িয়ে শিকড়ের জন্য পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সার প্রয়োগ: মাটিতে গোবর সার বা কম্পোস্ট প্রয়োগ করতে হবে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে ইউরিয়া এবং পটাশ প্রয়োগ করতে পারেন।
  • কীটনাশক: ট্রাইকোডার্মা বা নিম তেল ভিত্তিক বায়োলজিক্যাল কীটনাশক প্রয়োগ ভালো ফল দেয়। প্রয়োজনে কীটনাশক যেমন ডাইমেথোয়েট প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৩. শিম (Bean)

  • বপনের সময়: নভেম্বর থেকে জানুয়ারি।
  • পরিচর্যা: শিম গাছের বৃদ্ধির জন্য মাটি আর্দ্র রাখা জরুরি। তবে পানি জমতে দেওয়া উচিত নয়।
  • সার প্রয়োগ: শিমের জন্য নাইট্রোজেন সার বিশেষ উপকারী। গাছের বৃদ্ধির সময় নিয়মিত ইউরিয়া এবং কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • কীটনাশক: নিম তেল বা বায়োলজিক্যাল কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি কীটপতঙ্গের আক্রমণ বেশি হয়, তাহলে কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেন।

৪. টমেটো (Tomato)

  • বপনের সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি।
  • পরিচর্যা: টমেটো গাছের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রয়োজন। টমেটো গাছে পানি বেশি দেওয়া উচিত নয়, তবে মাটি ভিজিয়ে রাখা জরুরি।
  • সার প্রয়োগ: মাটিতে প্রথমে জৈব সার মিশিয়ে দিন। গাছের বৃদ্ধির সময় ইউরিয়া, পটাশ এবং ফসফেট সার প্রয়োগ করা হয়।
  • কীটনাশক: ডাইমেথোয়েট বা ইমিডাক্লোরপ্রিড কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রয়োজনে বায়োলজিক্যাল কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন।

৫. মুলা (Radish)

  • বপনের সময়: অক্টোবর থেকে জানুয়ারি।
  • পরিচর্যা: মুলার জন্য মাটি আলগা করে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি।
  • সার প্রয়োগ: বীজ বপনের আগে মাটিতে জৈব সার মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রতি ১৫-২০ দিনে ইউরিয়া প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • কীটনাশক: সাধারণত মুলাতে কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হয়, তবে নিম তেল বা বায়োলজিক্যাল কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৬. পালং শাক (Spinach)

  • বপনের সময়: অক্টোবর থেকে নভেম্বর।
  • পরিচর্যা: পালং শাকের জন্য পর্যাপ্ত আলো এবং সুনিষ্কাশিত মাটি প্রয়োজন। মাটি বেশি ভেজা বা শুষ্ক রাখা ঠিক নয়।
  • সার প্রয়োগ: ইউরিয়া এবং কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করে গাছের বৃদ্ধির সময় প্রতি ১০-১৫ দিনে একবার করে সার প্রয়োগ করা উচিত।
  • কীটনাশক: পালং শাকের ক্ষেত্রে কীটনাশকের প্রয়োজন কম হয়। তবে প্রয়োজনে নিম তেল বা লাল মাকড় প্রতিরোধক কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

সার ও ওষুধ প্রয়োগের সাধারণ নিয়ম:

  • সবজি চাষে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে যতটা সম্ভব জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যকর ফসল উৎপাদন করে।
  • কীটনাশক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বায়োলজিক্যাল কীটনাশক, যেমন নিম তেল বা ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করা উত্তম। তবে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে সঠিক মাত্রা মেনে প্রয়োগ করতে হবে।
  • সার ও কীটনাশক প্রয়োগের পর পরিশেষে ফসল সংগ্রহের আগে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হবে, যাতে রাসায়নিক পদার্থগুলির ক্ষতিকর প্রভাব ফসলের মধ্যে না থাকে।

শীতকালে এই সবজি ও শাকগুলি চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!